অনুভবে তুই ২
শাখাওয়াত
দস্তুর মতো
জমে গেল।
ভয়ার্ত কন্ঠে
আমতাআমতা করে
বলল, ম
ম মা
মা মানে?
মানে
বুঝিস না
শালা? তুই
বাচ্চা? ওয়েট,
বুঝাই বলি।
তোর যেটায়
বেশি কুড়কুড়ানি
সেটা যদি
না থাকে
তাহলেই তো
সব কুড়কুড়ানি
শেষ, সবকিছু
থেকে মুক্তি
পাবি। তোর
শুভাকাঙ্খী হয়ে
এটুকু কাজ
তো আমরা
করতেই পারি।
কী বলিস
তোরা?
ইমাদ
ডানহাতে টেবিলের
ওপর চাপড়
মেরে উৎসের
কথায় সায়
জানালো। তীব্র
শব্দে কেঁপে
ওঠলো শাখাওয়াত।
মুখে কিছু
বলতে পারলো
না। উৎসের
অগ্নিদৃষ্টি পরখ
করার দ্বিতীয়বার
সাহস হলো
না ওর।
নেহাদের অপদস্ত
করতে গিয়ে
যে এমন
পরিস্থিতিতে পড়বে
সেটা ভাবেই
নি সে।
উৎস আর
ওর বন্ধুদল
যে এতটা
হিংস্র সে
মোটেও কল্পনা
করেনি। সত্যিই
কী ওর
এই অবস্থা
করবে ওরা?
শাখাওয়াতের অন্তরাত্মা
কেঁপে ওঠলো।
সে আমতাআমতা
করে বলল,আমাকে ছেড়ে
দাও তোমরা,
কেন এরকম
করছো?
উৎস
সজোরে গালে
থাপ্পড় মেরে
বলল,আমার
বোনদের সাথে
কী নোংরা
ব্যবহার করেছিস
মনে নেই?
চেহারা দেখে
তো মনেই
হয় না,
তুই একটা
ইতর। টাকার
লোভ দেখাস
আমার বোনদের?
কেন রে?
আমরা কী
ভিক্ষা করে
ওদের বড়
করেছিলাম? তোর
মতো কীটের
সাথে আমার
বোনের বিয়ে
দেব? এরচেয়ে
ভালো তোকে
জবাই করে,
বস্তায় মুড়িয়ে
নদীতে ফেলে
দেওয়া, যাতে
দ্বিতীয়বার এসব
করার সাহস
না দেখাস।
শালা বাস্টার্ড!
শাখাওয়াত
দমে গেল।
এই ছেলে
আবার সত্যিই
ওকে জবাই
করে ফেলবে
না তো?
এদের পাঁচজনের
সাথে সে
কখনোই পেরে
ওঠবে না।
তবুও সে
মাফ চাইলো।
কম্পিত কন্ঠে
বলল,আমার
ভুল হয়ে
গেছে ভাই,
আমাকে যেতে
দাও তোমরা।
আর কোনোদিন
এরকম করব
না। আমাকে
ছেড়ে দাও,
যা চাইবে
তাই দিব।
শাখাওয়াতের
এই কথায়
সবাই বিস্ময়
নিয়ে তাকালো।
আশফি বসা
থেকে ওঠে
ওর প্যান্ট-শার্টের পকেট
খুঁজে ওয়ালেট,
ফোন নিয়ে
নিলো। ওয়ালেট
চেক করে
দেখল সেখানে
বেশকিছু টাকা।
গুণে দেখল
প্রায় পাঁচ
হাজার টাকা,
ফোনটাও দামী।
হঠাৎ সাইড
বাটনে চাপ
পড়তেই ফোনের
ওয়ালপেপার দেখে
‘নাউজুবিল্লাহ’ বলে
চিল্লিয়ে ওঠলো।
ইমাদ বিরক্ত
গলায় জিজ্ঞেস
করল,চেঁচাস
কেন শালা?
আশফি জিভ
কেটে উৎসের
দিকে তাকালো।
বলল,দেখ
কী নোংরা
পিক এর
ফোনে, এইজন্যই
শালার বেশি
কুড়কুড়ানি। উৎস ওর
হাত থেকে
ফোনটা নিয়ে
এক আছাড়
মারলো। ঠাস
শব্দ তুলে
সেটা কয়েক
পার্টে ভাগ
হয়ে মেঝেতে
ছড়িয়ে পড়লো।
শাখাওয়াতের চেহারা
রক্তশূন্য। আশফি
হাতের টাকাগুলোর
দিকে চেয়ে
বলল,নিচে
একজন বুড়ো
দাদা থাকে
না? ওনারে
দিয়া আসি?
কিছু কিনতে
ওনার কাজে
লাগব। এই
শালায় তো
মনে হয়,
এসব দিয়া
রাইতে ফুর্তি
করব। কী
বলিস দোস্ত?
উৎস বলল,যা, দিয়ে
আয়। শাখাওয়াত খানিকটা
ভরসার সুরে
বলল,টাকা-পয়সা, ফোন
তো নিয়ে
গেছ। এবার
ছেড়ে দাও
আমায়। রেনন ধপ
করে টেবিলের
ওপর বসে
পড়লো। ওর
হাতে একটা
আপেল। মুখ
‘হা’ করে
সেই আপেলে
বড় একটা
কামড় বসাতে
বসাতে মেয়েলি
কন্ঠস্বর নকল
করে বলল,ছেড়ে দিব?
এভাবে বলে
না বাবু।
তুমি আজ
সারারাত আমাদের
এখানে স্পেশাল
যত্নে থাকবা।
স্পেশাল
যত্ন মা
মানে?
বুঝতে
পারো নি,
তাই না
সোনামণি? ওকে
দাঁড়াও বুঝিয়ে
বলছি।রেনন টেবিলের
ওপর থেকে
নেমে দাঁড়ালো।
আপেলটা রেখে
দু’হাতের
মুঠো শক্ত
করে শাখাওয়াতের
নাক বরাবর
একটা ঘুষি
মারলো। কিঞ্চিৎ
পিছিয়ে দেওয়ালে
বারি খেল
শাখাওয়াত। মাথার
পেছনটায় ভোঁতা
একপ্রকার ব্যথা
অনুভূত হচ্ছে।
চোখ ঝাপসা
হয়ে আসতেই
রেনন ওর
দু’গাল
বাচ্চাদের মতো
জোরে টেনে
দিলো। শাখাওয়াতের
মনে হলো
ওর গালের
মাংস ভেদ
করে হাড্ডিতে
বুঝি আঁচড়
কাটছে কেউ।
ব্যথায় চোখমুখ
কুচঁকে ফেলল।
হাতদুটো দড়ি
দিয়ে বাঁধা
থাকায় সে
ছটফট করতে
লাগলো রেনন
ওকে ছেড়ে
দিলো। ওর
মুখের ওপর
থু থু
মেরে বলল,এটাই আমাদের
স্পেশাল যত্ন
সোনামণি। লাগবে
আরেকটু যত্ন?
বলো তো
করে দিই! শাখাওয়াত ভীত
চোখে তাকিয়ে
রইল। উৎস
হুঙ্কার দিয়ে
বন্ধুদের বলল,এরে সারারাত
আটকে রাখ৷
খাবার দিবি
না। সকালে
ছেড়ে দিবি।
আজকের কথা
মনে থাকলে
ভবিষ্যতে এসব
করার দুঃসাহস
দেখাবে না।
শালা কুত্তা।
ইমাদ
ভ্রু কুঁচকে
জিজ্ঞেস করল,নেহা বাসায়
গিয়ে আংকেলরে
এসব বলছেনি?
ওনার তো
জানা দরকার। কি
জানি! এই
তিন বোকা
কী করছে!
ভাগ্যিস নেহা
টেক্সট করেছিল
ঠিক সময়ে,
নয়তো বোকাগুলা
এর ফাইজলামির
শিকার হতো।
আমি আসি,
বাসায় যেতে
হবে।
আচ্ছা,
আমরা এরে
সামলায় নেব।
নিঃস্তব্ধ
পৃথিবীর পূর্বাকাশে
ঝলমলে আলো
ছড়াচ্ছে শুক্লাদ্বাদশীর
চাঁদটা। পুরো
আকাশ ঘিরে
রেখেছে কোটি
কোটি তারা।
অন্ধকার এই
রাত্রির আকাশখানি
মনোযোগ দিয়ে
অবলোকন করছে
উৎস। হালকা
ফিনফিনে হাওয়া
গায়ে কাঁটা
দিচ্ছে ওর।
মনোযোগে ভাটা
পড়লো ফোনের
কম্পনে। ভাইব্রেশন
মুডে থাকা
ফোনটি পকেটের
ভেতর যেন
হাত-পা
ছুঁড়ে কান্নাকাটি
জুড়ে দিয়েছে।
উৎস দ্রুতগতিতে
ফোনটা বের
করে স্কিনে
তাকাতেই ‘আদ্রিশ
ওয়াজিদ’ নামটি
দেখল। তাঁর
বড় চাচার
ছেলে। উৎস
কলটি রিসিভ
করলো। ওপাশ
থেকে আদ্রিশের
তীক্ষ্ণ কন্ঠ
শোনা গেল,নেহাদের সাথে
যে ছোটলোকটা
অসভ্যতামি করেছে
ওটার কী
ব্যবস্থা নিয়েছিস?
উৎস
প্রশ্নটার জন্য
প্রস্তত ছিল
না। আদ্রিশ
যে বোনদের
সাথে অন্যায়-অসভ্যতামি মেনে
নিতে পারবে
না সেটাও
ভালো করে
জানে। আদ্রিশের
হাতে পড়লে
এতক্ষণে শাখাওয়াতের
যে কী
অবস্থা হতো
ভাবতেই হাত
কেঁপে গেল
ওর। সেজন্য
আগেভাগেই ও
সবটা সামলে
নিয়েছে, যাতে
কোনো অঘটন
না ঘটে
যায়। কিন্তু
ওকে জানালো
কে এসব?
ফিহা বাঁদরটা
নিশ্চয়ই! উৎস
হেসে আদ্রিশের
প্রশ্নের জবাবে
বলল,ওর
ব্যবস্থা নেওয়া
হয়ে গেছে
ভাই। তুমি
চিন্তা করো
না। আদ্রিশ শুনলো।
একটু থেমে
আবার জিজ্ঞেস
করল,কোথায়
ছোটলোকটা? কী
ব্যবস্থা নিয়েছিস?
উৎস ঢোক
গিলে বলল,হাত-পা
ভেঙ্গে আটকে
রেখে আসছি। আদ্রিশ
স্বস্তি পেল
যেন। হালকা
গরম নিঃশ্বাস
ছেড়ে গমগমে
স্বরে বলল,গ্রেট। বাসায় আয়
তাড়াতাড়ি।
ফোন
কলটি কেটে
দিলো উৎস।
হাফ ছেড়ে
স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলে আবারও
বাইরে মনোযোগ
দিলো। চারপাশের
অন্ধকার কাটিয়ে
এক টুকরো
আলোকিত চাঁদ
ঠিক আকাশের
মাঝখানে এসেছে।
মায়াবী আলোয়
পৃথিবীকে যেন
ভাসিয়ে নিচ্ছে
অন্য কোনো
রাজ্যে! বাড়ি
পৌঁছাতে রাত
সাড়ে দশটা
বেজে গেল
ওর। ডাইনিং
থেকে পানি
খেয়ে লিভিংরুমের
দিকে পা
বাড়ালো উৎস।
গিয়ে দেখলো
নেহা, ফিহা
আর রোজা
বসে আছে।
তিনজনের মাথা
নিচু, দৃষ্টি
কার্পেটের ওপর।
আদ্রিশ ভলিউম
কমিয়ে টিভি
ছেড়ে রেখেছে,
কিন্তু কিছুই
দেখছে না।
চোখের দৃষ্টিতে
রাগ ফুটে
আছে। হঠাৎ
উৎসকে দরজায়
দাঁড়ানো দেখে
আদ্রিশ বলল,তোর এই
বোনটা বেশি
চালাকি শিখে
গেছে না?
আমাকে না
জানিয়ে তোকে
টেক্সট করেছে।
কত বড়
সাহস হয়েছে
বুঝতে পারছিস?
উৎস এসে
বসলো সিঙ্গেল
সোফার হাতলে।
তারপর বলল,ভুল হয়ে
গেছে থাক।
তোমাকে তো
ওরা ভয়
পায়। আমি
তো সামলে
নিয়েছি ব্যাপারটা।
আদ্রিশ ঝাঁঝালো স্বরে বলল,আমি কী বাঘ
নাকি ভাল্লুক
যে ভয়
পায়? যত্তসব
নাটক। আর
এরা কী
বাচ্চা? তিন
তিনজন মেয়ে
ওই কুত্তাটাকে
মিলে বেধড়ক
পিটাতে পারে
নাই? খুকী
সেজে থাকলে
নর্দমার কীটরা
এভাবেই অপদস্ত
করবে৷ যত্তসব
অপদার্থ..
উৎস
শান্ত গলায়
বলল,থাক
ভাই। যেটা
হওয়ার হয়ে
গিয়েছে। তো?
আব্বুরা কী
বললো?
আদ্রিশ
কাঠ কাঠ
গলায় জবাব
দিল,ডাস্টবিনের
সাথে বিয়ে
দেবে কে?
ক্যান্সেল।
ওহ,
যাক ভালোই।
অতঃপর
আদ্রিশ আর
উৎস শাখাওয়াতের
অবস্থা-ব্যবস্থা
নিয়ে কথা
বলতে লাগল।
নেহা অধৈর্য
হয়ে গেল।
কিন্তু আদ্রিশ
ওদেরকে যেতে
অনুমতি দেয়
নি। আর
না পেরে
নেহা ওর
পাশে বসা
ফিহাকে ফিসফিস
করে বলল,সব তোর
জন্য। ভাইকে
এসব কাহিনী
বলতে গেলি
কেন?
ফিহা
নিচুকন্ঠে বলল,ওই শাখাওয়াতটার
ওপর রাগ
হচ্ছিলো আমার।
তাই আদ্রিশ
ভাইয়ার হাতে
মার খাওয়াতে
ইচ্ছা করছিল!
ইচ্ছা
করলেই তুই
বলে দিবি?
জানিস না
ভাই কেমন?
ছোটলোকটাকে মেরেই
ফেলতো!
সেটাই
হওয়া দরকার
ছিল!
চুপ
থাক তুই।
ফিহা
মুখ কালো
করে বলল,ভালো করেছি
বলে দিয়েছি।
ওদের
ফিসফিসানি রোজার
কানেও পৌঁছালো।
সে ভীতগ্রস্ত
হয়ে বসে
আছে সোফার
এক কোণে।
আদ্রিশকে সে
অজানা কারণেই
ভয় পাচ্ছে।
লোকটার সামনে
প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ
করে সে।
আধঘন্টা যাবৎ
ওর সামনে
বসে আছে
ভাবতেই ঘেমে
ওঠলো সে।
এত শাসন
করে বোনদের
কেউ? তাও
আবার চাচাতো
বোনদের? নেহা-ফিহা দুজনেই
ভয় নিয়ে
বসে আছে।
তবে ওদের
মধ্যে ফিহা
আদ্রিশকে একটু
কমই ভয়
পায়। রোজা
এবার নেহার
দিকে চেপে
বসে কানে
কানে বলল,এই লোকটা
এত কড়া
কেন আপু?
আমার ভয়
করছে, যদি
চড় মেরে
দেয়? আমাকে
যাওয়ার সুযোগ
করে দাও
প্লিজ। মাথা
ব্যথা হয়ে
যাচ্ছে আমার!
ঘুম
পেলে চলে
যা। ফিহা
বললো।
রোজা
খানিকক্ষণ ইতস্তত
করে ওঠে
দাঁড়ালো। দুই
ভাইয়ের মনোযোগ
ওদের দিকে
নেই। রোজা
ধীরপায়ে দরজা
পেরুতে গেলেই
আদ্রিশ পেছন
থেকে রাগী
স্বরে বলল,এই মেয়ে
এই, তোমাকে
যাওয়ার পারমিশন
কে দিয়েছে?
চুপচাপ এখানে
বসে থাকো,
তোমার সাথে
হিসাব-নিকাশ
বাকি আছে
আমার। রোজা চমকে
ওঠলো। আদ্রিশের
ধমকি শুনে
চুপচাপ নেহার
পাশে গিয়ে
বসল। নেহাও
অসহায় চোখে
তাকালো। ভাইয়ের
মাথায় কী
চলছে সেটা
উৎসও বুঝতে
পারলো না।
রোজার চেহারা
রক্তশূণ্য। ওর
সাথে এই
যমদূতটার কীসের
হিসাব-নিকাশ?
ও তো
ভালো করে
চেনেই না
আদ্রিশকে। শুধু
জানে নেহার
বড় চাচার
ছেলে। শাখাওয়াতের
সাথে রোজা
যে জোর
গলায় কথা
বলেছে এজন্য
ওকে চড়-থাপ্পড় মারবে
নাকি?
কোন মন্তব্য নেই